এলজিএসপি-৩ প্রকল্প

জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কার্যকর ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হলো এলজিএসপি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্প শেষ হবে ২০২১ সালের জুন মাসে। দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ অর্থাৎ মোট ৪৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদকে এলজিএসপি এর কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩৫.০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ৩১৫৩ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা ২৩৮২ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দের অর্থ সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে।

LGSP-2 সম্পর্কে বিস্তারিত

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদানের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী কার্যকর সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের বিষয়টি চলে আসে সরকারের অন্যতম প্রধান বিবেচনায়। অনুভূত হয় যে, দায়িত্ব প্রদান নয় তা বাস্তবায়নে দিতে হবে ক্ষমতা ও আর্থিক স্বাধীনতা এবং তার জন্য প্রয়োজন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জনগণের বাস্তব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব, সে পথ খুঁজতেই সিরাজগঞ্জ জেলায় শুরু হয় ‘সিরাজগঞ্জ লোকাল গভর্ন্যান্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রজেক্ট (এসএলজিডিএফপি)’। এ সফল পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগ গত জুলাই ২০০৬ হতে জুন ২০১১ পর্যন্ত এলজিএসপি প্রকল্পর সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত ‘দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে সরাসরি থোক বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ অর্থ দিয়ে স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এলজিএসপি-২ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকায় পরিষদের জবাবদিহিতা ও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য

  • স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;
  • জনগণের দ্বারা উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ;
  • আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা;
  • ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি;
  • ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা;
  • জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা;
  • ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করা;
  • দারিদ্র বিমোচন;
  • নারীর ক্ষমতায়ন।

এলজিএসপি-র মূল বৈশিষ্ট্য

  • ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি থোক বরাদ্দ প্রদান;
  • প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ;
  • উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তদারকীতে মহিলাদের অগ্রাধিকারসহ সর্বস্তরের জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ;
  • দেশের সকল ইউনিয়নে সরাসরি থোক বরাদ্দ প্রদান করা ছাড়াও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাপ্রতিষ্ঠাকল্পে নিয়মিত অডিট ও মনিটরিং এর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা;
  • স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র বিমোচন, সরাসরি জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা;
  • সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা;
  • জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দায়বদ্ধতা ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্টা করা ও ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।

প্রকল্পের প্রভাব

দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে উল্লেখযোগ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়:

ক) আয় ও কর্মসংস্থান: এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদসমূহ যে থোক বরাদ্দ পাচ্ছে তা দ্বারা স্থানীয় জনগণের (জনঅংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণে) চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে মূলত রাস্তা, কালভার্ট, ব্রীজ, বাজার উন্নয়ন, প্রাথমিক শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন, মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত স্কিমসমূহ প্রাধান্য পাচ্ছে। এ সকল কার্যক্রম এলাকার দরিদ্র মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

খ) প্রাতিষ্ঠানিক: প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদ একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের নির্ভরযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে ইউনিয়ন পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ, উম্মুক্ত বাজেট অধিবেশন, কার্যকর মনিটরিং ও অডিট ব্যবস্থার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা হবে।

গ) দারিদ্র হ্রাস: স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা নিরূপণ হবে বিধায় দরিদ্র জনগণের উপযোগী উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। দরিদ্র জনগণের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক স্কিমসমূহ কার্যকর অবদান রাখবে। যেহেতু জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হবে সেহেতু দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত প্রকল্পসমূহ অগ্রাধিকার পাবে। অধিক পরিমাণ অর্থ ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার কারণে স্থানীয় দারিদ্র বিমোচনে এই অর্থ ব্যবহৃত হবে।

ঘ) উৎপাদন: প্রকল্পের থোক বরাদ্দের অর্থ দ্বারা স্থানীয় জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন হবে তার মাধ্যমে এলাকার কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। কারণ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যানবাহন চলাচল, বাজারজাতকরণ, উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

ঙ) মহিলা ও শিশু: এ প্রকল্পে ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণ ও দায়িত্ব পালনের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় থোক বরাদ্দের ৩০% অর্থ মহিলাদের দ্বারা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্কিম বাস্তবায়নে করা হবে। মহিলা সদস্যগণ স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবেন। কারণ তাদের স্কিম বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় মহিলাগণ স্থানীয় চাহিদা নিরূপনে ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাগণ বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পাবেন।

চ) পরিবেশ: এ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য স্কিম দ্বারা যাতে স্থানীয় পরিবেশের উপর কোন বিরূপ প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সচেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পের অপারেশনাল ম্যানুয়ালে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তা প্রকল্পভুক্ত সকল ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আশা করা যায় প্রকল্পের বিভিন্ন স্কিম স্থানীয় পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পের অঙ্গসমূহ

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও এর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটিকে চারটি অঙ্গে বিভাজন করে প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্রম তদারকীর জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন করে কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক-বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত রয়েছেন।

ক) ইউনিয়ন পরিষদ অনুদান
নির্ধারিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিবছর দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদকে এ প্রকল্পের আওতায় মৌলিক থোক বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ৪,৫৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ৪৯১.০০ কোটি টাকা এবং ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ৪,৫৪৭টি ইউনিয়নে অনুকূলে ৫৪৭.৭০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কর্মদক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ হিসাবে ৩,৬৭০টি ইউনিয়নের অনুকূলে ৮৩.০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে ৪৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ৬১৯.১৩ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এ বছরে ৩৩৩২ টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে কর্মদক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ হিসাবে ৯২৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে নিম্নের দু’ধরণের থোক বরাদ্দ প্রদান করা হয়:

মৌলিক থোক বরাদ্দ (BBG)

মৌলিক থোক বরাদ্দের ২৫% অর্থ সকল ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সমহারে বিতরণ করা হয়।
অবশিষ্ট ৭৫ ভাগ অর্থ, অডিটে উত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে ৯০% এবং আয়তনের উপর ভিত্তি করে ১০% বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ মৌলিক থোক বরাদ্দের (বিবিজি) অর্থ দুই কিস্তিতে প্রদান করে থাকে যা প্রতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
মৌলিক থোক বরাদ্দ (ইইএ) ও দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (চইএ) এর অন্তত ৩০% অর্থ নারীদের দ্বারা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্কিম বাস্ত-বায়নের জন্য ব্যয় করা হয়।
মৌলিক থোক বরাদ্দ (ইইএ) ও দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (চইএ) এর সর্বোচ্চ ১০% অর্থ সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কাজে (প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক শিখন, স্কিম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা, পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাসমূহ, হিসাব রক্ষণ, ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্যাদি কম্পিউটারে এন্ট্রি, মহিলা উন্নয়ন ফোরামকে সহায়তা প্রদান এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধি সহায়তা) ব্যয় করা যাবে। ১০% অর্থ উল্লেখিত ক্ষেত্রে ব্যয় না হলে তা স্কিম বাস্তবায়নে ব্যয় করা যায়।

দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (PBG)

মৌলিক থোক বরাদ্দ প্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদসমূহের সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহ প্রদানের জন্য দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। আর্থিক ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক, যেমন রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, রাজস্ব আদায়ের হার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, জনগণের অংশগ্রহণ, পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং প্রতিবেদন ইত্যাদি বিষয়ে যে সকল ইউনিয়ন পরিষদ দক্ষতা প্রদর্শন করে তাদেরকে এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় বছর ২০১২-১৩ থেকে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ প্রদান শুরু হয়েছে।

দক্ষতার মানের উপর ভিত্তি করে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম সারির ৭৫% ইউনিয়ন পরিষদকে তিনটি ভাগে ভাগ করে এ বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে।
দক্ষতার মানের দিক থেকে প্রথম ২৫% ইউনিয়ন পরিষদ তাদের প্রাপ্য মৌলিক থোক বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩০% অর্থ পাচ্ছে।
পরবর্তী ২৫% ইউনিয়ন পরিষদ তাদের প্রাপ্য মৌলিক থোক বরাদ্দের অতিরিক্ত ২০% অর্থ পাচ্ছে।
তৎপরবর্তী ২৫% ইউনিয়ন পরিষদ তাদের প্রাপ্য মৌলিক থোক বরাদ্দের অতিরিক্ত ১০% অর্থ পাচ্ছে।

খ) তথ্য প্রবাহ এবং জবাবদিহিতা
প্রকল্পের আওতাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদসমূহ তাদের আয়, ব্যয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয় মাসিক/ত্রৈমাসিক সভায় জনগণের সামনে উন্মুক্ত করছে এবং প্রকল্পের নির্ধারিত ছকে এ সকল বিষয়ের ষান্মাসিক প্রতিবেদন ইউএনও ও ডিডিএলজি বরাবরে প্রেরণ করছে। এতে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে এবং জনগণ তা প্রত্যক্ষ করছে। বেসরকারি অডিট ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রকল্পভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদসমূহের সমুদয় কার্যক্রমের ফাইন্যান্সিয়াল অডিট ও কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি অডিট টিম প্রতিবছর মোটামুটি ভাবে ২০% ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প সংক্রান্ত কার্যক্রম অডিট করছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদকে আর্থিক স্বাধীনতা দেয়া হলেও জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পরিষদের দায়বদ্ধতা সরকার ও জনগণের নিকট নিশ্চিত হচ্ছে।

গ) প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন
ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় জনবল ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের এ অঙ্গের মাধ্যমে দেশজুড়ে তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রকল্পের চলতি মেয়াদ পর্যন্ত নিম্নবর্ণিত সংখ্যক চেয়ারম্যান, সদস্য, ইউপি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে

নংযাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে/হবেসংখ্যা (জন)প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থা/দপ্তর
মাষ্টার ট্রেইনার১৫০এনআইএলজি, বার্ড ও আরডিএ
সদস্য (প্রতি উপজেলায় ১০ জন)৪৮৬০
UP Functionaries৬২৩৮২ইউআরটি
WC & SSC সদস্য৫৬৬৪৩০
District Facilitators৬৯পিএমইউ
DDLG৬৪

এলজিএসপি বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও কৌশল

ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি কাজ করছে। এ সকল কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি নারী ও অনগ্রসর মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনমতের প্রতিফলন থাকে।

কমিটিসমূহ

ওয়ার্ড কমিটি (ডব্লিউসি)

স্কিম বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭ সদস্যের একটি ওয়ার্ড কমিটি আছে। একাধিক ওয়ার্ডে বিস্তৃত স্কিমের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধি সমন্বয়ে এ কমিটি ৭ থেকে ৯ সদস্য বিশিষ্ট হতে পারে। ওয়ার্ড কমিটির গঠন নিম্নরূপ-

  • ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রকাশ্য সভা অনুষ্ঠান করে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয় ।
  • সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য বা সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য হন কমিটির আহ্বায়ক।
  • কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭ জন ঃ
  • ইউপি সদস্য দুই জন।
  • স্কুল শিক্ষক একজন।
  • স্থানীয় সমাজসেবক দুই জন (একজন নারী ও একজন পুরুষ)।
  • এনজিও / সুশীল সমাজের প্রতিনিধি একজন।
  • মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (পাওয়া না গেলে একজন সাধারণ নাগরিক)।
  • ওয়ার্ড কমিটির কমপক্ষে ২ জন মহিলা সদস্য হবেন ।
  • কোনো ওয়ার্ড কমিটির সদস্য স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য হতে পারবেন না।
  • সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যগণ কমপক্ষে ৩টি ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক হবেন। একজন মহিলা সদস্য, তাঁর নির্বাচনী এলাকায়, পালাক্রমে ৩টি ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক হবেন।
  • ওয়ার্ড সদস্যবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রকাশ্য সভা থেকে অন্যান্য সদস্যদের এলাকার জনসাধারণ মনোনীত করবেন।
  • কোনো ব্যক্তি একই সাথে একটির বেশি ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক/সভাপতি হতে পারবেন না।
  • সদস্যদের মধ্য থেকে কমিটি কর্তৃক মনোনীত একজন সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

ডব্লিউ সি’র দায়িত্ব ও কার্যাবলি:

  • ওয়ার্ড সভার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন কার্যক্রম এবং জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে উক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা।
  • সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে থোক বরাদ্দের আওতায় ঠিকাদার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন স্কিমগুলো নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা।
  • শ্রমঘন কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
  • সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অথবা দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে মালামাল ক্রয় করা/স্কিম বাস্তবায়ন মনিটর করা।
  • স্কিমের সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব যাচাইকরণ।
  • সরবরাহকারী/যোগানদাতার নিকট থেকে প্রদত্ত ক্রয় আদেশ/কার্যাদেশ অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী/সেবাসমূহ বুঝে নেওয়া।
  • সকল ক্রয়ের বিল, ভাউচার, মাস্টাররোল ইত্যাদি সংরক্ষণ করা এবং ইউনিয়ন পরিষদকে অডিট এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ঐসকল কাগজপত্র প্রদান করা।
  • এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা।

স্কিম সুপারভিশন কমিটি (এসএসসি)

  • প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটি আছে।
  • ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে গঠিত এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭ জন।
  • ওয়ার্ড সভা মিটিং-এ জনসাধারণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই কমিটি গঠিত হয়।
  • কমিটির সদস্যবৃন্দ নিজেদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও একজন সদস্য-সচিব মনোনীত করে।
  • উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্কিম তত্ত্বাবধান কাজের জন্য একজন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে এই কমিটিতে মনোনয়ন দেন।
  • ইউনিয়ন পরিষদের কোনো প্রতিনিধি স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য হতে পারেন না এমনকি ওয়ার্ড কমিটির কোনো সদস্য স্কিম সুপারভিশন কমিটির সদস্য হতে পারেন না। স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটির কমপক্ষে দুইজন সদস্য হবেন নারী।
  • স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটি গঠিত হবার পরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য এই কমিটির একটি তালিকা কোনো প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দেনে এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে এই তালিকাটি টানানোর ব্যবস্থা করেন।
  • মৌলিক থোক বরাদ্দ এবং দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ হতে অর্থায়নকৃত ইউনিয়ন পরিষদের সকল স্কিম বাস্তবায়নকালে স্কিম সুপারভিশন কমিটি এগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান, পর্যালোচনা এবং মনিটরিং করে।

স্কিম সুপারভিশন কমিটি নিম্নলিখিত দায়িত্বসমূহ পালন করে:

  • অনুমোদিত স্কিম শর্তাবলি অনুযায়ী বাস্তবায়নকালে কাজের মান, পরিমাণ ও সময়সীমা ঠিক আছে কি না তার নিয়মিত মনিটরিং করা।
  • ঠিকাদারের নিয়মিত কাজকর্মে সজাগ দৃষ্টি রাখা (কাজের মান, কাজ সময়মত হচ্ছে কি না, ইত্যাদি)।
  • পরিবীক্ষণকালে কোনো ত্র“টি পাওয়া গেলে সংশোধনের জন্য ওয়ার্ড কমিটিকে পরামর্শ দেওয়া। তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে লিখিতভাবে ইউনিয়ন পরিষদকে জানানো এবং ইউনিয়ন পরিষদও যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে লিখিতভাবে বিজিসিসি-কে জানানো।
  • ওয়ার্ড কমিটি স্কিম ডিজাইন/নকশা ও প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার মধ্যে যথাযথ মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন করেছে কি না, স্কিম তত্ত্বাবধান কমিটি হতে এমর্মে ছাড়পত্র দেওয়া। এ ছাড়পত্র পাবার পর ইউনিয়ন পরিষদ ক্রস চেকের মাধ্যমে সমাপ্ত কাজটির বিল পরিশোধ করবে।
  • কার্যাদেশ/ক্রয় আদেশ পর্যালোচনা করা।
  • স্থানীয় অনুদান সংগ্রহ।
  • সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থা পর্যালোচনা করা।
  • বাস্তবায়ন কাজের মান ও এর প্রভাব সম্পর্কে সভার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অবহিত করা।
  • এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা।
  • সর্বোপরি বেসরবকারি ঠিকাদার কর্তৃক স্কিম বাস্তবায়নকালে স্কিম সুপারভিশন কমিটি সজাগ দৃষ্টি রাখবে। যে সকল স্কিম, স্কিম সুপারভিশন কমিটি তত্ত্বাবধান করছে সেগুলির চুক্তি, চূড়ান্ত ডিজাইন/নকশা এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের কপিসহ কার্যাদেশের কপি ইউনিয়ন পরিষদ স্কিম সুপারভিশন কমিটিকে সরবরাহ করবে।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি

টেন্ডরের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য স্কিমসমূহের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে।

কমিটির গঠন নিম্নরূপ:

আহবায়ক: স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি/কলেজের শিক্ষক (উপযুক্ত ব্যক্তি পাওয়া না গেলে ইউএনও কর্তৃক মনোনীত সরকারি কর্মকর্তা);
সদস্য: উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা;
সদস্য: ইউপি কর্তৃক মনোনীত ইউপি পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা/কর্মচারী;
সদস্য: ইউপি হিসাব সহকারী (যদি থাকে);
সদস্য সচিব: ইউপি সচিব।

কমিটি’র দায়িত্ব:

  • প্রাপ্ত দরপত্র উন্মুক্তকরণ;
  • উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গৃহীত দরপত্রের মূল্যায়ন করা;
  • নির্ধারিত ছক অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করা;
  • কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশসহ দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন ইউপি’র নিকট দাখিল করা।

উপজেলা রিসোর্স টিম

এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালীকরণের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান, সদস্য এবং সচিবদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানকল্পে দেশের প্রতিটি উপজেলায় নিম্নরূপ উপজেলা রিসোর্স টিম গঠন করা হয়েছে:

(ক) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) আহ্বায়ক
(খ) উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত ৪ জন সরকারি কর্মকর্তা সদস্য
(গ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত ৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, প্রক্তন ইউপি চেয়ারম্যান/সচিব ইত্যাদি)

উপজেলা রিসোর্স টিম (Union Resource Team) একটি কর্মমুখী ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। যখন, যেখানে এবং যে জন্য প্রয়োজন হবে এ টিমের আহবায়ক ইউনিয়নগুলোকে সেরূপ সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যকে অনুরোধ জানাবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউআরটি এর একজন সদস্যকে সদস্য সচিব হিসাবে মনোয়ন প্রদান করবেন।

কমিটির কার্যপরিধি (Terms and Reference):

(ক) উপজেলা রিসোর্স টিম (URT) -এর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এলজিএসপি-২ কর্তৃক আয়োজিত কোন প্রশিক্ষণ বা অন্য কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা;
(খ) সংশ্লিষ্ট উপজেলার আওতাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান;
(গ) সংশ্লিষ্ট উপজেলায় এলজিএসপি-২ এর আওতায় গৃহীত ঈধঢ়ধপরঃু ইঁরষফরহম কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা;
(ঘ) ব্লক গ্রান্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করা।

ব্লক গ্রান্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি (বিজিসিসি)

মাঠ পর্যায়ে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে সফলভাবে প্রকল্পোর বাস্তবায়ন এবং যথাযথভাবে তা মনিটরিং-এর জন্য প্রতিটি উপজেলায় নিম্নরূপভাবে ব্লক গ্রান্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি (বিজিসিসি) গঠন করা হয়েছে :

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)সভাপতি
উপজেলার অধীনস্থ সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসদস্য
ইউনিয়ন পরিষদ থোক বরাদ্দের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী মহিলা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসদস্য
সিভিল সোসাইটি/ব্যক্তিখাতের (প্রাইভেট সেক্টর) সদস্যসহ উপজেলা রিসোর্স টিমের (ইউআরটি) সদস্যগণসদস্য
উপজেলা প্রকৌশলী/সহকারী প্রকৌশলী, এলজিইডিসদস্য-সচিব

* উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিশেষভাবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিজিসিসি সভায় উপস্থিত থাকবেন।

বিজিসিসি নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোতে ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে পরামর্শ ও সহায়তা দিবে:

  1. ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন;
  2. স্কিমের কারিগরি ও আর্থিক সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন;
  3. বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় ও তাদের সহায়তা নিশ্চিতকরণ;
  4. ইউনিয়ন পরিষদসমূহের মধ্যে এবং উপজেলার সঙ্গে তথ্য বিনিময় নিশ্চিতকরণ;
  5. উপজেলা পরিষদ বা অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে পরিকল্পিত বা বাস্তবায়িত স্কিমের ক্ষেত্রে দ্বৈততা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ;
  6. সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ;
  7. এডিপি ও বাজেট বাস্তবায়নে স্থিরকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সার্বিক অগ্রগতি মূল্যায়ন;
  8. উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় ও/অথবা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে এমন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া;
  9. ইউপি ও উপজেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও ত্বরান্বিত করা এবং; দক্ষতা মূল্যায়ন চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার মান উন্নয়ন। বিজিসিসি প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার সভায় বসবে। বিজিসিসি এর বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সমন্বয় সভায় রিসোর্স পার্সন হিসেবে অংশগ্রহণ করার জন্য উপজেলায় বিদ্যমান বিভিন্ন সংস্থাকে (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। প্রয়োজনে, বিজিসিসি এর সভাপতি অতিরিক্ত বিজিসিসি সভা আহ্বান করতে পারবেন।

এলজিএসপি-২ এর অর্থ যেসব কাজে ব্যয় করা যাবে না

  • ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য কিংবা কর্মীদের বেতন, মজুরি কিংবা অন্য কোনো সুবিধা দেওয়া।
  • ক্ষুদ্র অর্থায়নসহ কোনো অর্থনৈতিক সেবা যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোগে ঋণ সরবরাহ করা হয়।
  • এমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না, যার নেতিবাচক পরিবেশগত/সামাজিক প্রভাব আছে।
  • ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত কোনো প্রকল্পে বিবিজি/পিবিজি তহবিল থেকে অর্থায়ন করা যাবে না।
  • ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো, দেওয়াল নির্মাণ, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত কোনো প্রকল্পে বিবিজি/পিবিজি তহবিল থেকে অর্থায়ন করা যাবে না।

জেলা সমন্বয় কমিটি (ডিসিসি)

মাঠ পর্যায়ে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদকে সফলভাবে এলজিএসপি’র আওতায় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন, মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য দেশের সকল জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নিম্নরূপভাবে জেলা সমন্বয় কমিটি (ডিসিসি) গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসকসভাপতি
জেলার সকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসদস্য
জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারসদস্য
জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন ভাইস চেয়ারম্যান (পর্যায়ক্রমিকভাবে)সদস্য
জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন ইউপি চেয়ারম্যান (পর্যায়ক্রমিকভাবে)সদস্য
প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন নারী ইউপি সদস্য (পর্যায়ক্রমিকভাবে)সদস্য
জেলা পর্যায়ে সংশি¬ষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রধান (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সমাজ সেবা, বিআরডিবি এবং জেলায় কর্মরত অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জেলা পর্যায়ের দপ্তর প্রধান)সদস্য
জেলা প্রশাসন কর্তৃক মনোনীত এনজিও প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ে অভিজ্ঞ/আগ্রহী গণ্যমান্য ব্যক্তি (৩-৫ জন)সদস্য
উপপরিচালক, স্থানীয় সরকারসদস্য

ডিসিসি’র কার্যাবলি

  • উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্কিমের অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং এলজিএসপি:২- বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণ;
  • মৌলিক থোক বরাদ্দ এবং দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দের আওতায় স্কিম/সেবা প্রদানের নীতি প্রণয়ন/চিহ্নিতকরণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে দিকনিদের্শনা ও পরামর্শ প্রদান;
  • জেলা পর্যায়ে প্রকল্প সংক্রান্ত আপত্তি/অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ কার্যক্রম তদারকি এবং প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার/বিজিসিসি এর সিদ্ধান্ত/ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প/স্কিম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিভিন্ন গ্র“পের দায়ের করা অভিযোগ/আপত্তি নিয়ে আলোচনা করা ও নিষ্পত্তিতে দিকনির্দেশনা প্রদান করা;
  • উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং ইউপি অপারেশনাল ম্যানুয়েল ও স্থানীয় সরকার (ইউপি) আইন ২০০৯ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ;
  • ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে সময় মতো সহায়তা প্রদানের জন্য উপজেলা পর্যায়ের দপ্তরসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান;
  • ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিরীক্ষা কার্যক্রমসহ এলজিএসপি:২- সংশ্লি¬ষ্ট অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন।

জেলা সমন্বয় কমিটি প্রতি ৬ মাসে অন্তত একবার সভা করবে; তবে, সভাপতি জরুরি প্রয়োজনে একাধিক সভা আহ্বান করতে পারবেন। জেলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠানের জন্য সদস্য-সচিব সকল সদস্যকে অন্তত এক সপ্তাহ আগে লিখিত নোটিশ প্রদান করবেন। সকল জেলা সদরে অথবা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো একটি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সভার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।

আশার কথা

আশা করা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিভিন্ন অবকাঠামো যেমন- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্টানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণে অবদান রাখবে। এছাড়াও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালীকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে এলজিএসপি-২ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

Footer Separator